অনুমোদিত রসায়ন ফুড প্রিজারভেটিভস্ বা খাদ্য সংরক্ষক

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - রসায়ন - রসায়ন- প্রথম পত্র | | NCTB BOOK

প্রিজারভেটিভ কীভাবে কাজ করে? 

উত্তর: প্রিজারভেটিভ নিম্নোক্ত উপায়ে খাদ্যদ্রব্যকে নষ্ট করা থেকে বিরত রাখে

(i) খাদ্যকে সরাসরি বায়ু ও পানির সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখে

(ii) কিছু কিছু প্রিজারভেটিভ অম্লীয় পরিবেশ তৈরী করে যাতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বংশ বৃদ্ধি করতে না পারে।

(iii) এনজাইমের কার্যকারিতা নষ্ট করে।

(iv) খাদ্যের মধ্যে অবিরাম চলা রাসায়নিক প্রক্রিয়া গতিকে শ্লথ করে দেয়।

 

ক) প্রাকৃতিক খাদ্য সংরক্ষক (Natural food preservatives): প্রাকৃতিক উৎস থেকে যেসব যৌগ পাওয়া যায়। যেমন-

১। খাদ্য লবণ (NaCl): নির্দিষ্ট ঘনমাত্রায় খাদ্য লবণের দ্রবণ দ্বারা খাদ্য সংরক্ষণকে কিউরিং বা Curing বলা হয়। NaCl দ্রবণ খাদ্য দ্রব্য থেকে মুক্ত পানিকে শোষণ করে নেয়। ফলে খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে অণুজীব জন্মানোর অনুকূল পরিবেশ পায় না। অনেক ক্ষেত্রে লবণের দ্রবণের সাথে সামান্য ল্যাকটিক এসিড ব্যবহার করা হয়। ফাঙ্গাস ও ছত্রাকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেক সময় NaCl এর সাথে সামান্য চুনের পানি যোগ করা হয়। 

২। চিনি (Sugar): চিনি অসমোসিস পদ্ধতিতে খাদ্যের অতিরিক্ত আর্দ্রতা শোষণ করে খাদ্যকে সংরক্ষণ করে। চিনির গাঢ় দ্রবণের সংস্পর্শে ব্যাকটেরিয়া কোষের মধ্যস্থ জলীয় অংশকে চিনির গাঢ় দ্রবণ অসমোসিস প্রক্রিয়ায় শুষে নেয়। ফলে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না। পানি ছাড়া অণুজীব খাদ্যের ভিতর জন্মাতে পারে না। এতে খাদ্য সংরক্ষিত অবস্থায় থাকে।

৩। তেল (Oil): খাদ্যের উপরিভাগে তেলের স্তর অণুজীবকে খাদ্যের সংস্পর্শে আসতে বাধা দিয়ে খাদ্য সংরক্ষণ করে। তেল খাদ্যকে জরিত হতে না দিয়ে পচনের থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ Anti-Oxidant হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া O2​ তৈলাক্ত স্তরভেদ করে পানির স্তরে যেতে পারে না।

৪। মসলা (Spices): বিভিন্ন প্রকার হলুদ, মরিচ গুড়া খাদ্যের স্বাদই শুধু বৃদ্ধি করে না। এদের মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন উপাদান Anti-Oxidant, Anti-Virus এবং Anti-bacterial হিসেবে কাজ করে। এ সমস্ত উপাদানগুলো বায়ুর O2​ এর সাথে মাছ, মাংসের বিক্রিয়ার গতি হ্রাস করে। পাশাপাশি PH মান নিয়ন্ত্রণ করে। এনজাইমের কার্যকারিতা হ্রাস করে।

৫। অ্যালকোহল (Alcohol): এটি পানিতে অধিক মাত্রায় দ্রবণীয়। H বন্ধনের মাধ্যমে H2​O সাথে মিশে গিয়ে সর্বত্র সুষম ঘনমাত্রা বজায় রেখে অণুজীবের বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার রোধ করে। অধিকাংশ অনুজীব বংশবিস্তারের অনুকুল PH হল 6.5 থেকে 7.5

৬। ভিনেগার (Vinegar): 6-10% CH3​COOH এসিডের জলীয় দ্রবণকে ভিনেগার বলে। এটি খাদ্য দ্রব্যের PH মানকে কমিয়ে আনে অর্থাৎ অম্লত্ব বাড়িয়ে দেয়। ফলে উচ্চ অম্লীয় দ্রবণে ব্যাকটেরিয়াগুলো সহজে ধ্বংস হতে পারে।

খ) কৃত্রিম খাদ্য সংরক্ষক (Artificial food preservatives): কৃত্রিমভাবে তৈরি যেসব রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয় তাদেরকে কৃত্রিম খাদ্য সংরক্ষক বলে। তিন ধরনের কৃত্রিম সংরক্ষক আছে। যথা-

১। Anti-Microbial Agent: যেসব প্রিজারভেটিড খাদ্যে ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাস বৃদ্ধি রোধ করে তাকে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট বলে। এটি খাদ্যদ্রব্যের ব্যাকটেরিয়া, Mold (ছত্রাক), ঈষ্ট এর বৃদ্ধি প্রতিহত করে। বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষক এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যেমন- ((Na,K)) সরবেট SO2​। তাছাড়া মাছ ও মাংসজাত খাদ্য সংরক্ষণেNa বা K,NO2​−– এবং NO3​−– লবণ ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া বেনজয়িক এসিড, Na – বেনজয়েট, প্রোপানয়িক এসিড, Na – প্রোপানয়েট।

i) Naবেনজয়েট: বেনজয়িক এসিডের দ্রাব্যতা কম বলে এর লবণ Na বেনজয়েট ব্যবহৃত হয়। এটি খাদ্যের মধ্যে সহজে দ্রবীভূত হয়ে বেনজয়িক এসিড উৎপন্ন করে যা খাদ্যের কোষে শোষিত হয়। এতে কোষের PH মান কমে আসে ফলে অণুজীবগুলো বংশবিস্তার করতে পারে না। বেনজোয়িক এসিডের PH মান 4.2। 

ii) Na প্রোপানয়েট: Na প্রোপানয়েট সংরক্ষক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটিও PH মান কমিয়ে অণুজীবের বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে। এটি সাধারণত পাউরুটি এবং পনির সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।

iii) বেনজায়েট: জ্যাম, জেলি, কার্বনেটেড বেভারেজ, ফলের রস ও আচার সংরক্ষণে সোডিয়াম বেনজোয়েট ব্যবহার করা হয়। কম PH মানের কার্যকারিতা সীমিত, তবে খাদ্যের এসিডিটি বাড়ালে এর কার্যকারিতা বাড়ে। খাদ্যে 0.1% বা এর চেয়ে কম পরিমাণে এটি ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে

সোডিয়াম বেনজোয়েট খাদ্যের মধ্যে দ্রবীভূত হয়ে বেনজয়িক এসিড উৎপন্ন করে যা খাদ্যের কোষে শোষিত হয়। এতে ইন্ট্রাসেলুলার কোষে PHএর মান দুই এর নিচে নেমে আসে ফলে ফসফোফ্রুক্টোকাইনেজের মাধ্যমে গ্লুকোজের অ্যান অ্যারোবিক ফারমেন্টেশন শতকরা 95% কমে যায়। এটি ঈস্ট (Yeast) এর কোষ প্রাচীরের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে এবং ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়াকে চরমভাবে ব্যাহত করে। ঈস্ট থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন এনজাইম ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং খাদ্যকে নষ্ট করে। ফলে বেনজয়েটযুক্ত খাদ্যে অণুজীব জীবনধারণ ও বংশবিস্তার করতে পারে না।

iv) প্রোপানয়েট: এটি খাদ্যে মোল্ড জন্মাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এটি পাউরুটি, কেক ও পনির সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয়। নিম্ন PHমানের একটি খাদ্যে এটি ভাল কাজ করে । PH বাড়লে এর কার্যকারিতা কমে যায়। খাদ্যে 0.1% হারে প্রোপানয়েট ব্যবহার করা যায়। ক্যালসিয়াম প্রোপানয়েট যুক্ত পরিবেশে অণুজীব বাঁচতে পারে না। এর অনুমোদন যোগ্য মাত্রা হল 1%.

v) সরবেট: এটি মোল্ড ও ঈস্ট প্রতিরোধে খুবই কার্যকর তবে ব্যাকটেরিয়া রোধে কম শক্তিশালী। এটি ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদান করে। পনির, পাউরুটি, বিস্কুট, কেক, বেভারেজ, সিরাপ, ফলের জুস, জ্যাম, জেলি, আচার প্রভৃতিতে এটি ব্যবহৃত হয়। এটি ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম বা পটাসিয়াম সরবেটরূপে বাজারে পাওয়া যায়। খাদ্যে সংরক্ষণের অনুমোদিত মাত্রা 0.1%, এটি কম PH মানে খুব কার্যকর, তবে PH বাড়লে এর কার্যকারিতা কমতে থাকবে। সরবেট খাদ্যের PH এর মান 4 – 5 সীমায় রেখে এসিডিক পরিবেশ তৈরি করে ক্ষতিকারক অণুজীব ধ্বংস করে। মানবদেহে সরবিক এসিড শোষিত হয় এবং বিয়োজিত হয়ে CO2​, এবং H2​Oতৈরি করে। এর বিষক্রিয়া খাদ্য লবণের 121​এবং সোডিয়াম বেনজোয়েটের 401​ভাগ। তাই সরবেট একটি অতি ব্যবহৃত সক্রিয় প্রিজারভেটিভস। এটি খাদ্যের স্বাদ, গন্ধ এবং রং এ কোনো পরিবর্তন করে না। 

vi) জৈব এসিড ও তার লবণ: সাইট্রিক এসিড, প্রোপানয়িক এসিড, ল্যাকটিক এসিড এবং তাদের লবণ বাহির থেকে যোগ করা হয় অথবা খাদ্যের ভেতরে উৎপন্ন হয়। ফলের ঘ্রাণ ও সংরক্ষণের জন্য সিরাপ, ড্রিংকস, জ্যাম, জেলিতে সাইট্রিক এসিড যোগ করা হয়। বিভিন্ন ধরনের লবণ দ্রবণে উৎপাদিত খাদ্য বা আচার তৈরিতে ল্যাকটিক এসিড ও এসিটিক এসিড ব্যবহার করা হয়। কমলালেবু, আনারস ইত্যাদির রসে সাইট্রিক এসিড আছে।

vii) এসিটিক এসিড: ভিনেগার হিসেবে এসিটিক এসিড ব্যবহার করা হয়। ভিনেগারে 6-10% এসিটিক এসিড থাকে। ভিনেগার খাদ্যের PH কমাতে ভূমিকা রাখে। খাদ্যের সাথে ভিনেগার ব্যবহার করলে খাদ্যের ব্যাকটেরিয়া ও ঈস্টের বিরুদ্ধে এটি প্রতিরোধ গড়ে তোলে বা ধ্বংস করে। এটি আচার ও সস তৈরিতে ব্যাপক পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। 

viii) নাইট্রাইট ((NO2−​)) ও নাইট্রেট ((NO3−​)) : মাংস ও মাংসজাত দ্রব্য সংরক্ষণে KNO3​ও KNO2​বা NaNO3​ও NaNO2​এর মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। নাইট্রেট খুব ভালো সংরক্ষক নয়। মাংসে Clostridium botulinum প্রতিরোধে নাইট্রাইট ও নাইট্রেট লবণের যথাক্রমে 200ppm ও 500 ppm দ্রবণ ব্যবহার করা হয়।

কৃত্রিম খাদ্য সংরক্ষক

খাদ্য নিরাপত্তা

কৃত্রিম খাদ্য সংরক্ষক

খাদ্য নিরাপত্তা

খাদ্য নিরাপত্তা

                                             

খাদ্য নিরাপত্তা
Picture6

                                                                       

Picture7

ix) ইপোক্সাইড: ইথিলিন অক্সাইড জাতীয় ইপোক্সাইড কম আর্দ্রতা বিশিষ্ট খাদ্যবস্তুর জন্য কার্যকরী সংরক্ষক, মসলা, বাদাম ও শুষ্ক ফল সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। 

Picture14
খাদ্য নিরাপত্তা

২। Anti-Oxidant Agent : খাদ্য দ্রব্য যাতে জারিত না হয় তাই এটি ব্যবহৃত হয়। এটি খাদ্যদ্রব্যকে কালো দাগ সৃষ্টি হতে রক্ষা করে । SO2​, ভিটামিন E, C, বিটা ক্যারোটিন, BHT, BHA, TBHQ, প্রোপাইল গ্যালেট প্রভৃতি Anti-Oxidant হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত SO2​এর উৎস হিসেবে K মেটা-বাই-সালফাইট ((K2​O,2SO3​ বা K2​ S2​O5​) বা পাইরো সালফাইট ব্যবহৃত হয়। তরল বা গ্যাসীয় SO2​ অপেক্ষা এটি ব্যবহার করা সহজ। নিরপেক্ষ বা ক্ষারীয় মাধ্যমে এটি স্থিতিশীল হলেও কার্বনিক, সাইট্রিক বা টারটারিক এসিডের এর মত দুর্বল এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে KMS/SO2​ গ্যাস উৎপন্ন করে। যেমন- ফল বা ফলের রস সংরক্ষণে যখন KMS যোগ করা হয় তখন তা নিম্নরূপে ফলের রসের এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে SO2​গ্যাস উৎপন্ন করে। 

খাদ্য নিরাপত্তা
খাদ্য নিরাপত্তা
খাদ্য নিরাপত্তা

মুক্ত মূলক শোষণকারী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হলো– (১) বিউটাইলেটেড হাইড্রক্সি এনিসল, BHA (butylated hydroxy anisole); (২) বিউটাইলেটেড হাইড্রক্সি টলুইন, BHT; (৩) টারসিয়ারি বিউটাইল হাইড্রকুইনোন, TBHQ; (৪) প্রোপাইল গ্যালেট (Propylgallate)। 

অক্সিজেন শোষণকারী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট : (১) ভিটামিন-C, (২) ভিটামিন-E (৩) সালফাইট লবণ।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমূহ দুই শ্রেণিভুক্ত: যেমন (i) প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও (ii) অনুমোদিত কৃত্রিম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।

প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমূহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাদ্য-বস্তুর উৎসে থাকে। যেমন,

১. ভিটামিন-C বা এসকরবিক এসিড : টকফল, বিভিন্ন শাকসবজি, কাঁচামরিচ ইত্যাদি।

২. ভিটামিন-E বা টকোফেরল : সবুজ শাক-সবজি, শস্য-দানা বা বীজ, গমের অংকুর, উদ্ভিজ্জ তৈল (সয়াবিন তৈল, সরিষা তৈল) ইত্যাদি।

৩. বিটা (β) ক্যারোটিন : মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, টমেটো, গাজর, বিভিন্ন ফল যেমন: তরমুজ, জাম, এপ্রিকট ইত্যাদি।

8. অধাতু সেলেনিয়াম, Se(34) : মাছ, মুরগির মাংস, ডিম, রসুন ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত কৃত্রিম অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমূহ হলো BHA, BHT, TBHQ ও প্রোপাইল গ্যালেট।

৩। কিলেটিং এজেন্ট (Chelating Agent): খাদ্যবস্তুতে বিদ্যমান অবস্থান্তর ধাতুর আয়নগুলোকে সন্নিবেশ বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ রাখতে যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয় তাদেরকে কিলেটিং এজেন্ট বলে। যেমন: EDTA, ল্যাকটিক এসিড, পলি ফসফেট, ইথিলিন ডাই অ্যামিনো। Co3+ চর্বির মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন A বিনষ্ট করে ইত্যাদি। খাদ্যবস্তুর মধ্যে থাকা অবস্থান্তর ধাতুর আয়ন (trace elements : Fe2+,Fe3+,Co3+,Cu2+) তৈল-চর্বির জারণ-বিয়োজন ক্রিয়ায় প্রভাবকরূপে ক্রিয়া করে। যেমন কপার আয়ন দ্বারা এসকরবিক এসিড, ভিটামিন-E, থায়ামিন, ফলিক এসিড বিনষ্ট হয় এবং Cu,Fe উভয়ে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন-A বিনষ্ট করে ও খাদ্যবস্তুকে বিবর্ণ করে। তাই খাদ্যবস্তুর এ সব অবস্থান্তর ধাতুর আয়নকে দুই বা ততোধিক সন্নিবেশ বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ রাখতে যে রাসায়নিক যৌগ ব্যবহৃত হয়, এদেরকে কিলেটিং এজেন্ট বলে। (Greek ‘Chele (কিলে) = Crab’s Claw)। খাদ্যবস্তু সংরক্ষণে শিল্পক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কিলেটিং এজেন্ট হলো EDTA [ethylene diamine tetra acctate, ((O2​C−H2​C)2 N− CH2​CH2​−N(CH2​CO2​−)2​] এর চারটি O পরমাণু ও দুটি N পরমাণুতে মোট ছয়টি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন যুগল আছে। তাই EDTA আয়ন লিগ্যান্ড বা কিলেটিং এজেন্টরূপে Fe2+,Fe3+ এর সাথে ছয়টি সন্নিবেশ বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ হতে পারে। এছাড়া ইথিলিন ডাইঅ্যামিন ((H2​ N−CH2​−CH2​−NH2​)) কিলেটিং এজেন্ট ব্যবহৃত হয়। গাছের নির্যাস, সরিষার গুড়া, চা তেও প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।

❒  ৪। ভিনেগার একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য সংরক্ষক ব্যাখ্যা কর। 

ইথানয়িক এসিডের 6-10% জলীয় দ্রবণকে ভিনেগার বলা হয়। এটি একটি বহুল ব্যবহৃত Preservative যা বাজারে সিরকা নামেও পরিচিত। এটি ব্যবহারে খাদ্যদ্রব্যের PH মান কমিয়ে দেয়। এতে বিভিন্ন প্রকার অণুজীব জীবন ধারণ বা বংশবিস্তার করতে পারে না। এর সুবিধাগুলো হচ্ছে-

১। এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

২। এটি মৃদু এসিড হওয়ায় খাওয়ার সাথে গ্রহণ করলে অ্যাসিডিটি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না বরং খাবারও  দেহের pH এর সমতা বজায় রাখে।

৩। এটি পানিতে যে কোনো অনুপাতে দ্রবণীয়। কারণ এটি পানির অণুর সাথে H বন্ধন গঠন করতে পারে ফলে খাদ্যের পানির সাথে সহজে মিশে সর্বত্র সুষম ঘনমাত্রা বজায় রেখে অণুজীবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে।

৪। এর স্ফুটনাঙ্ক H2​O অপেক্ষা বেশি হওয়ায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণের সময় তা প্রয়োগে এর বাস্পীভূত হওয়ার সুযোগ থাকে না।

৫। ভিনেগারের জলীয় দ্রবণের PH মান 2.35 যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট।

❒  Anti-oxidant কী? এটির কৌশল ব্যাখ্যা কর। 

যে সমস্ত রাসায়নিক পদার্থ নিজে জারণ ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে অন্য পদার্থের জারণ ক্রিয়া রোধ করে তাদেরকে Anti-Oxidant বলে। সাধারণত খাদ্য সংরক্ষকের Anti-Oxidant খাদ্য বস্তুর সংরক্ষণে সহায়তা করে। এর ফলে খাদ্যবস্তু সহজে জারিত হয় না। খাদ্য দ্রব্যের কালো দাগ সৃষ্টি থেকে রক্ষা করে। 

❒  Anti-oxidant এর কৌশল ব্যাখ্যা কর। 

বায়ুমন্ডলের O2​ দ্বারা জারণ খাদ্য নষ্ট হওয়ার একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া। চর্বি জাতীয় খাদ্যের ক্ষেত্রে জারণ প্রক্রিয়াটি একটি প্রবল সমস্যা হিসেবে পরিগণিত। চর্বির জারণ শিকল (Chain Reaction) বিক্রিয়ার মাধ্যমে সংগঠিত হয়। চর্বির অণু যখন O2​এর সাথে বিক্রিয়ায় লিপ্ত হয় তখন অধিক ক্রিয়াশীল মুক্ত মূলক বা (Free Radical) উৎপন্ন হয়

Anti oxident

উৎপন্ন alkyl free-radical টি আরেক অণু O2​এর সাথে বিক্রিয়া করে Per-Oxi-free redical তৈরি করে

R∙+O2​=R−O−O∙

পরবর্তীতে Per-Oxi-free-radical অপর একটি চর্বির অণু সাথে বিক্রিয়া করে alkyl-Hydro-Per-Oxide এবং alkyl free radical তৈরি হয়। উৎপন্ন অ্যালকাইল free-radical বিক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করে যা শিকল বিক্রিয়ার মতো চলতে থাকে

R−O−O∙+R−H=R−OOH+R∙

এভাবে চর্বির সাথে বিক্রিয়ার ফলে চর্বির পচন ঘটে। ফলে বিরক্তিকর গন্ধের সৃষ্টি হয়। এই শিকল বিক্রিয়াকে বন্ধ করার জন্য Anti-Oxidant(BHA, BHT), গুলো ব্যবহৃত হয়। এই Anti-Oxidant গুলো জারণের শিকল বিক্রিয়ার পথকে ভিন্ন পথে নিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায় কম সক্রিয় অ্যারাইল (Ar.) free-radical উৎপন্ন হয়। যেটি পরবর্তীতে আর অংশগ্রহণ করে না। এর ফলে শিকল বিক্রিয়াটি থেমে যায় এবং চর্বির জারণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়।

❒  বিভিন্ন প্রকার Preservative এর ক্রিয়া কৌশল এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো বর্ণনা কর। 

১। Na বেনজয়েট: এটি ইস্ট এবং Mould কে আক্রমণ করে। এটি Anti-microbial প্রকৃতির। এটি অ্যালার্জি এবং মস্তিষ্ক কোষের ক্ষতি করে। এটি Anti-microbial প্রকৃতির।

২। সালফাইট : এটি বিভিন্ন প্রকার অণুজীবকে আক্রমণ করে। এর কৌশল Anti-Oxidant প্রকৃতির। মাথা ব্যথা, এলার্জি এবং ক্যান্সার সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

৩। নাইট্রাইট: এটি বিভিন্ন প্রকার Bacteria ধ্বংসের ব্যবহৃত হয়। এর কৌশল Anti-microbial প্রকৃতির। এটি ক্যান্সার সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

৪। ফরমেট/ফরমেট লবণ: এটি ইস্ট এবং মন্ডকে আক্রমণ করে। এটি Anti-microbial প্রকৃতির। এটি খাবারের রং এবং রুচি নষ্ট করে, কিডনী নষ্ট হয়।

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

Promotion